অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের সমালোচনার দায়ে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশটির মুসলিম কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরকে।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২১৮-২১১ ভোটে তাকে পদ থেকে সরানোর প্রস্তাব পাস হয়। মার্কিন কংগ্রেসে যে দু’জন মুসলিম নারী সদস্য রয়েছেন, তাদের একজন ইলহান ওমর।
ইলহান ওমর ফিলিস্তিনে দমনপীড়নের কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিন্দা ও তিরস্কার করতেন বলে অনেক দিন থেকেই বেশ চাপের মুখে ছিলেন। তিনি ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইসরাইলকে মার্কিন অর্থ ও সামরিক সাহায্য দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনারও দাবি জানাতেন।
একই কারণে রাশিদা তালিব নামের আরও একজন মুসলিম নারী কংগ্রেস সদস্যও দীর্ঘকাল ধরে চাপের মুখে ছিলেন।
ইলহান ওমর সম্প্রতি বলেছিলেন যে যারাই ফিলিস্তিনে ইসরাইলি জবর-দখলের বিরোধী ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার বা নির্মূলের কাজ করে থাকে।
ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিব দু’জনই মার্কিন সরকারের নীতির বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের নিন্দা করে আসছেন। তারা ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থনকে পছন্দ করতেন না বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় ইসরাইলপন্থী লবিগুলো তাদের ওপর রাজনৈতিক নানা অজুহাতে চাপ দিয়ে এসেছে। তাই দেখা গেছে কিছুকাল আগে ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিব অধিকৃত ফিলিস্তিন সফর করতে চাইলেও তা বাতিল করে দেয়া হয়। তারা ইসরাইলি পণ্য বর্জন, ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সেখানে বিনিয়োগ না করারও আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় তাদের ওপর নানা চাপ জোরদার হতে থাকে। কিন্তু নানা চাপ সত্ত্বেও তারা নিজ নিজ অবস্থানে অবিচল রয়েছেন।
ওমর ও তালিব ইসরাইল-বিরোধী এবং মুসলমান হওয়ায় মার্কিন কংগ্রেসের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সদস্যরা তাদের ওপর চাপ জোরদার করেছেন। রিপাবলিকানরা এখন কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এক্ষেত্রে তারাই বেশি সক্রিয়। মাইক ওয়াল্টজ নামের একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, মার্কিন ও ইসরাইলি অভিন্ন মূল্যবোধের বিরোধী কারো স্থান পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে নেই।
ইলহান ওমর তাকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়ার নিন্দা জানিয়েছেন এবং কংগ্রেসের স্পিকার ম্যাককারথির এই সিদ্ধান্তকে বর্ণবাদী ও বিদেশী-বিদ্বেষ-উদ্ভূত বলে উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে ইহুদিবাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং দেশটিতে যে প্রকৃত রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই ইলহান ওমরের ঘটনা তার দৃষ্টান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলই সব সময় ইহুদিবাদী মহলের আর্থিক সাহায্য নিয়ে থাকে এবং তাই নির্বাচনের পর দেশটির সরকারগুলো ইসরাইলের সেবায় নিয়োজিত থাকে।
তবে নানা বাধা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জন-প্রতিনিধিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির মুসলমানরা স্থানীয়, প্রাদেশিক ও ফেডারেল পর্যায়ে নানা নির্বাচনে অন্তত ৮৩ আসন পেতে সক্ষম হয়েছে। তাই ইসরাইল ও ইসরাইলপন্থী মার্কিন লবিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল-বিরোধীদের ব্যাপক উত্থান নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কিন সরকারগুলোর রেড-লাইন যাতে কেউ অতিক্রম করতে না পারে সে লক্ষ্যে তারা সক্রিয়। ইলহান ওমরকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া ছাড়াও তারা ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়ানোর কাজও জোরদার করছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও এবং ইসরাইলি লবিগুলোর প্রভাব অতীতের চেয়েও বেশি হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন সমাজে ইসরাইল বিরোধী মনোভাব বেড়েই চলেছে।
ইলহানের জন্মস্থান সোমালিয়া। ওই দেশ থেকে আসা প্রথম আমেরিকান-মুসলিম আইন-প্রণেতা তিনি। অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যু নিয়ে কাজ করেন ইলহান। ২০১৬ সালে তিনি মিনেসোটা থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন ।
Leave a Reply